গুরুত্বপূর্ণঃ
বীরের প্রত্যাবর্তন গুলশান দুই নম্বর ঘেঁষে ভাটারা
ইউনিয়নে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এলাকাটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ
এক অঞ্চল। মোজাম্মেল হক বীরপ্রতীকের উদ্যোগে স্থাপিত হয়েছে ভাস্কর্যটি।
|
অবস্থান
|
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের উল্টো পাশেই ভাটারা
ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বউত্তর-পূর্ব কোণে ফাজিলারটেক
শাওড়াতলায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে 'বীরের প্রত্যাবর্তন' নামে ভাস্কর্যটি।
|
আকার
|
ছোলমাইদ তিন রাস্তার সংযোগে স্থাপিত হয়েছে ৫৯ ফুট ৬
ইঞ্চি উঁচু ভাস্কর্য 'বীরের প্রত্যাবর্তন'। ভাস্কর্যটির বেদির উচ্চতা ৪১
ফুট। বেদির চারপাশে পোড়ামাটির ফলকে তুলে ধরা হয়েছে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ, ১৯৪৮
সালের দেশ বিভাগ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আর একাত্তরের
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। উঁচু বেদির ওপর স্থাপিত রয়েছে এক মুক্তিযোদ্ধার অবয়ব।
২৮ ফুট উঁচু এ যোদ্ধা বিজয় ছিনিয়ে অস্ত্র কাঁধে বীরের বেশে ফিরছেন। বেদির নিচে
ভাস্কর্যের বাকি অংশ গাছের গুঁড়ির আকার নিয়েছে। ভাস্কর্যটির নিচে আছে একটি
পাঠাগার। মুক্তিযুদ্ধের বই দিয়ে সাজানো সেটি। চারপাশের দেয়ালে লাগানো
যুদ্ধকালের পত্রপত্রিকা। এ ভাস্কর্য ঢাকার মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের মধ্যে
সর্বোচ্চ।
|
স্থাপত্য তাৎপর্য
|
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীরপ্রতীক
মোজাম্মেল হক এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে 'বীরের
প্রত্যাবর্তন' নামে এ ভাস্কর্যটি তিনি গড়ে তুলেছেন।
ভাস্কর্যে স্থান পেয়েছে ১৮৫৭ সাল থেকে শুরু করে ব্রিটিশ ভারতের সময়ের নেতাদের
ছবি। জওয়াহের লাল নেহরু, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার,
মাস্টারদা সূর্যসেন, মহাত্মা গান্ধী,
ক্ষুদিরাম, সীমান্ত গান্ধী যারা বাংলাদেশের
জন্য ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে
সহযোগিতা করেছেন, '৭১-এ শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের
ভাষণ, জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণ, ১৬ ডিসেম্বর, সাত বীরশ্রেষ্ঠ, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান, হুসেইন
মুহম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়া, শেখ
হাসিনার কর্ম এবং সাম্প্রতিক সময়ে যারাই দেশের জন্য অবদান রেখেছেন তাদের
কৃতকর্মের ছবি টেরাকোটার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
|
ভাস্কর্যটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা।
এর সিংহভাগ মোজাম্মেল হক এবং বাকি টাকা তার শুভাকাক্সিক্ষরা দিয়েছেন। প্রায়
আড়াই বছর সময় লেগেছে ভাস্কর্যটি তৈরি করতে। টেরাকোটার কাজ ধামরাইয়ের গোবিন্দ পাল, ডামি
নারায়ণ পাল এবং পুরো ভাস্কর্যটির ফিনিশিং করেছেন সুদীপ্ত মল্লিক সুইডেন। এটি
২০০৮ সালের ২৯ মার্চ উদ্বোধন করেন জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।
|
বাংলাদেশের
স্বাধীনতাযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী
সংগ্রামের স্মৃতিকে লালন করার জন্য এবং পরবর্তি প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার
চেতনাকে প্রবাহিত করার জন্য। স্বাধীনতাযুদ্ধ স্মরণে নির্মিত এসব ভাস্কর্য
রাজধানী শহর ছাড়িয়ে দেশের সর্বত্রই প্রায় রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের বাইরে, বাঙালি
অধ্যুষিত অঞ্চলেও রয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধের এসব ভাস্কর্য।
|