হুমায়ুন আজাদ

গুরুত্বপূর্ণঃ


·       অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ
·       জন্ম- হুমায়ুন কবীর এপ্রিল ২৮, ১৯৪৭ কামাড়গাঁ, বিক্রমপুর, মুন্সিগঞ্জ, বাংলাদেশ
·       মৃত্যু- আগস্ট ১১, ২০০৪ (৫৭ বছর)
·       মিউনিখ, জার্মানি
·       সমাধিস্থল- রাড়িখাল
·       ছদ্মনাম- হুমায়ুন আজাদ
·       পেশা- অধ্যাপক, কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী
·       ভাষা- বাঙলা, ইংরেজি
·       জাতীয়তা- বাংলাদেশী
·       জাতি- বাঙালি
·       নাগরিকত্ব- বাংলাদেশী
·       শিক্ষা- পিএইচডি
·       শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় // এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়
·       সময়কাল -আধুনিক
·       ধরন -আধুনিক
·       বিষয়- নারীবাদ, সাহিত্য, বিজ্ঞান
·       সাহিত্য আন্দোলন প্রথাবিরোধিতা
·       উল্লেখযোগ্য পুরস্কার- একুশে পদক (২০১২), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৬),
·       সক্রিয় বছর- ১৯৭৩, ১৯৮০২০০৪
·       দাম্পত্যসঙ্গী -লতিফা কোহিনূর (বি. ১৯৭৫; মৃত্যুপূর্ব ২০০৪)
·       সন্তান- মৌলি আজাদ, স্মিতা আজাদ, অনন্য আজাদ
হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১১ আগস্ট ২০০৪; ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একজন বাংলাদেশি কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনীতিক ভাষ্যকার। তিনি বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, নিরাবরণ যৌনতা, নারীবাদ, রাজনৈতিক এবং নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য ১৯৮০'র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। গতানুগতিক চিন্তাধারা তিনি সচেতনভাবে পরিহার করতেন। তাঁর নারী (১৯৯২), দ্বিতীয় লিঙ্গ (২০০১) এবং পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৪) গ্রন্থ তিনটি বিতর্কের ঝড়তোলে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়।

অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ছিলেন একজন প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক মননশীল লেখক। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭০ টির বেশি। আজাদের ১০টি কাব্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৮টি কিশোরসাহিত্য, ৭টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ তাঁর জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ সালে নারীবাদী গবেষণামূলক গ্রন্থ নারী প্রকাশ করে গোটা দেশে সাড়া তুলেন। বইটি ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিলো। এ-গ্রন্থ তাঁর বহুল আলোচিত গবেষণামূলক কাজ হিসেবেও স্বীকৃত। তাঁকে ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং ভাষাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্যে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। তাঁর রচিত কিশোরসাহিত্য ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত আব্বুকে মনে পড়ে জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে ২০০৩ সালে।

জীবনের শেষার্দ্ধে অকুতোভয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা, সামরিক শাসনের বিরোধিতা, নারীবাদী বক্তব্য এবং একই সঙ্গে নিঃসংকোচ যৌনবাদিতার জন্যে তিনি ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত অভীষ্ট তাঁর সাহিত্যকে প্রবলভাব প্রভাবান্বিত করেছিল। লেখার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তীব্র আক্রমণের কারণে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হত্যা প্রচেষ্টার শিকার হন

আজাদ ১৯৪৭ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে তাঁর নানাবাড়ি কামাড়গাঁওয়ে জন্ম নেন তাঁর জন্ম নাম ছিলো হুমায়ুন কবীর। ১৯৮৮ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর নাম পরিবর্তনের মাধ্যম তিনি বর্তমান নাম ধারণ করেন। বাবা আবদুর রাশেদ প্রথম জীবনে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও পোস্টমাস্টারির চাকুরি করতেন পরে ব্যবসায়ী হন। মা জোবেদা খাতুন একজন গৃহিণী ছিলেন।তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে আজাদ ছিলেন পিতামাতার প্রথম পুত্রসন্তান। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পিতৃবিয়োগ ঘটে।তিনি ছেলেবেলায় প্রায় ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত রাড়িখালের প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠেন।
আজাদ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নের পর তৃতীয় শ্রেণি বাদ দিয়ে তিনি সরাসরি চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন রাড়িখালের স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউশন-এ। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। এ বিদ্যালয় থেকে তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ডের অধীনে ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকিউলেশন (বর্তমানে মাধ্যমিক বা এসএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।এরপর তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৬ সালে তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল বাংলা ভাষায় সর্বনামীয়করণ। এই গবেষণাপত্র পরবর্তীকালে ১৯৮৩ সালে প্রোনোমিনালাইজেশান ইন বেঙলি নামে বাংলা একাডেমি থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
কর্মজীবন
হুমায়ুন আজাদ পেশায় শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিশেবে। এখানে কিছুকাল কর্মরত থাকার পর ১৯৭০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। একই বছর ১৯৭২ সালের শেষ দিকে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন এবং পরবর্তী কালে কয়েক বছর বাংলা বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলা বিভাগে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।
ব্যক্তিগত জীবন
হুমায়ুন আজাদ ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে লতিফা কোহিনুরকে বিয়ে করেন। তাঁর দুই কন্যা মৌলি আজাদ, স্মিতা আজাদ এবং এক পুত্র অনন্য আজাদ। বাংলাদেশে যখন মৌলবাদ বিস্তার লাভ করতে থাকে, বিশেষ করে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত, তখন ২০০৪ এ প্রকাশিত হয় হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ গ্রন্থ। এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠি তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়, এবং বিভিন্ন স্থানে হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালায়। তিনি এই বইটিতে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে ফ্যাসিবাদী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এর কঠোর সমালোচনা করেন আর তারই জের ধরে ২০০৪ সালে হুমায়ুন আজাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা হয়, যার দায়িত্ব পরবর্তীতে জমিয়াতুল মুজাহেদীনের সন্ত্রাসবাদীরা স্বীকার করে। হুমায়ুন আজাদ ১১ আগস্ট ২০০৪ সালে জার্মানির মিউনিখ শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
সাহিত্যিক জীবন
হুমায়ুন আজাদ নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ই কবিতাচর্চা শুরু করেন। তবে তাঁর প্রথম লেখা ছাপা হয়েছিল দৈনিক ইত্তেফাকের শিশুপাতা কচিকাঁচার আসরে।
ভাষাবিজ্ঞান গবেষণা
১৯৬০-এর দশকে হুমায়ুন আজাদ যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র তখন পশ্চিমের ভাষাবিজ্ঞানী চম্‌স্কি-উদ্ভাবিত 'সৃষ্টিশীল রূপান্তরমূলক ব্যাকরণ' (transformational-generative grammar (TGG)) তত্ত্বটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য হুমায়ুন আজাদ এই তত্ত্বের কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বাংলা ভাষার রূপমূলতত্ত্ব তথা বাক্যতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন। এর মাধ্যমে বাংলার ভাষাবিষয়ক গবেষণায় আধুনিক ভাষাবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সূত্রপাত করেন। তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভের নাম ছিল Pronominalization in Bengali (অর্থাৎ বাংলা সর্বনামীয়করণ)পরবর্তীতে এটি একই শিরোনামের ইংরেজি বই আকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এর পর ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলা ভাষার বাক্যতত্ত্বের ওপর বাক্যতত্ত্ব নামে একটি বাংলা বই প্রকাশ করেন। একই সালে তিনি বাঙলা ভাষা শিরোনামে দুই খণ্ডের একটি দালীলিক সঙ্কলন প্রকাশ করেন, যাতে বাংলা ভাষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর বিগত শতাধিক বছরের বিভিন্ন ভাষাবিদ ও সাহিত্যিকের লেখা গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতাত্ত্বিক রচনা সংকলিত হয়। এই তিনটি গ্রন্থ বাংলা ভাষাবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসাবে বিবেচিত হয়। তিনি পরবর্তী কালে তুলনামূলক-ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান ও অর্থবিজ্ঞানের উপর দু'টি সংক্ষিপ্ত প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তক লেখেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি বাংলা ভাষার একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ রচনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত অকাল মৃত্যুর কারণে তাঁর এই আগ্রহ বাস্তবায়িত হতে পারেনি।
রাজনৈতিক সমালোচনা
১৯৮০-র দশকের শেষভাগ থেকে হুমায়ুন আজাদ সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। এ সময় তিনি খবরের কাগজ নামীয় সাপ্তাহিক পত্রিকায় সম্পাদকীয় নিবন্ধ লিখতে শুরু করেন। সামরিক শাসনের বিরোধিতা দিয়ে তার রাজনৈতিক লেখালিখির সূত্রপাত। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম গ্রন্থটি প্রধানত রাষ্ট্রযন্ত্রের ধারাবাহিক সমালোচনা। ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যভিচারের প্রামাণিক দলিল এই গ্রন্থটি।
বিশ্বাস ও দর্শন
হুমায়ুন আজাদ ছিলেন স্বঘোষিত নাস্তিকতাঁর অন্যতম প্রণোদনা ছিল প্রথা-বিরোধিতা। কবিতা, উপন্যাস ও রচনা সর্বত্রই তিনি প্রথাবিরোধী ও সমালোচনামুখর। সর্বপ্রথম গুস্তাভ ফ্লবেয়ারের আদলে ১৯৯১ প্রকাশিত প্রবচনগুচ্ছ এদেশের শিক্ষিত পাঠক সমাজকে আলোড়িত করতে সক্ষম হয়েছিল। হুমায়ুন আজাদের লেখালেখিতে বিজ্ঞানমনস্কতার ছাপ স্পষ্ট। তবে তিনি নিজেই ছিলেন তাঁর চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাসের প্রধান মুখপাত্র। একটি বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তাঁর স্বপ্ন ছিল। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকেই তিনি মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ গড়ার পক্ষে অনুকূল বলে মনে করতেন।
সাহিত্যকৃতি
কবিতা
গদ্যের জন্য বেশি জনপ্রিয় হলেও হুমায়ুন আজাদ আমৃত্যু কাব্যচর্চা করে গেছেন। তিনি ষাটের দশকের কবিদের সমপর্যায়ী আধুনিক কবি। সমসাময়িক কালের পরিব্যাপ্ত হতাশা, দ্রোহ, ঘৃণা, বিবমিষা, প্রেম ইত্যাদি তার কবিসত্বার প্রধান নিয়ামক। প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম অলৌকিক ইস্টিমার যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ এর জানুয়ারিতে (পৌষ, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ)। কাব্যগ্রন্থটি তিনি উৎসর্গ করেন ১৯৬৮-১৯৭২ এর রাত-দিনগুলোর উদ্দেশে। তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ জ্বলো চিতাবাঘ প্রথম প্রকাশিত হয় ফাল্গুন, ১৩৮৬ বঙ্গাব্দে (মার্চ ১৯৮০) সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। প্রথম প্রকাশের সময় বৈশাখ ১৩৯২ বঙ্গাব্দ (এপ্রিল, ১৯৮৫)[১৮] ১৩৯৩ বঙ্গাব্দের ফাল্গুনে (মার্চ ১৯৮৭) প্রকাশিত হয় তাঁর চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ যতোই গভীরে যাই মধু যতোই ওপরে যাই নীলতার পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে প্রকাশিত হয় ১৩৯৬ বঙ্গাব্দের ফাল্গুনে (ফেব্রুয়ারি ১৯৯০)এর আট বছর পর ১৪০৪ এর ফাল্গুনে (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮) প্রকাশিত হয় তার ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দুকাব্যগ্রন্থটি কবি তার 'প্রিয় মৃতদের জন্য' উৎসর্গ করেন। সপ্তম কাব্যগ্রন্থ পেরোনোর কিছু নেই প্রকাশিত হয় ১৪১০ বঙ্গাব্দের মাঘ(ফেব্রুয়ারি, ২০০৪) মাসে। এটিই হুমায়ুন আজাদের জীবদ্দশায় প্রকাশিত শেষ কাব্যগ্রন্থ। তবে হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর পর বঙ্গাব্দ ১৪১১ এর ফাল্গুনে (ফেব্রুয়ারি,২০০৫) এই সাতটি কাব্যগ্রন্থ সহ আরো কিছু অগ্রন্থিত ও অনূদিত কবিতা নিয়ে তাঁর কাব্যসমগ্র প্রকাশিত হয়। নব্বুইয়ের দশক থেকে ঢাকার আগামী প্রকাশনী তাঁর গ্রন্থাবলীর প্রধান প্রকাশক।
কথাসাহিত্য
মূলত গবেষক ও প্রাবন্ধিক হলেও হুমায়ূন আজাদ ১৯৯০-এর দশকে একজন প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু অবধি তাঁর প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা 12 তাঁর ভাষা দৃঢ়, কাহিনীর গঠন সংহতিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক দর্শন স্বতঃস্ফূর্ত।
১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন প্রথম উপন্যাস ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল-এর মধ্যে দিয়ে। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় সব কিছু ভেঙে পড়েআর এই বইয়ের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে ১০,০০০, এবং আরো ১টি ধর্ষণ, ২০০৩ সালে একটি খুনের স্বপ্ন এবং ২০০৪ সালে প্রকাশিত পাক সার জমিন সাদ বাদ উপন্যাসসমূহ স্পষ্টতই বক্তব্যমুখী। রাজনৈতিক প্রণোদনাই এ সব রচনার প্রধান নিয়ামক। ভাষা-ভঙ্গী ও কাহিনী - দু'দিক দিয়েই তাঁর মধ্যে আক্রমণাত্মকতা প্রত্যক্ষ করা যায়।
প্রবন্ধ
নারী
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় প্রবন্ধের বই নারীআর এই বইয়ের প্রকাশের পর তিনি মৌলবাদীদের তীব্র রোষানলে পড়েন। মৌলবাদীদের চেষ্টার ফলে ১৯৯৫ সালে নারী বইটি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ সরকারঅবশ্য ৪ বছর পর ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে বইটি আবার পুনর্মূদ্রিত হয়। তার আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম গ্রন্থে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের দূরবস্থার সাহসী বর্ণনা আছে।
হত্যা প্রচেষ্টা
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতকদের আক্রমণের শিকার হন তিনি। বিদেশে নিবিড় চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি কিছুটা সুস্থ হন। জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ নামক ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের একজন শীর্ষনেতা শায়খ আব্দুর রহমান পরবর্তিতে হুমায়ুন আজাদ এবং একইসাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইউনুসকে হত্যার নির্দেশ দেবার কথা স্বীকার করে। এই হত্যা প্রচেষ্টার মামলা দ্রুত শেষ করার জন্য উচ্চ আদালত ফেব্রুয়ারি ২০১৪তে আদেশ প্রদান করে।
মৃত্যু
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি পার্টি থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর পর জার্মান সরকারের তত্ত্বাবধানে মিউনিখে তার এপার্টমেন্টে পাওয়া সব জিনিসপত্র ঢাকায় তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। ওই জিনিসপত্রের ভেতরেই পাওয়া যায় তার হাতের লেখা তিনটি চিঠি। চিঠি তিনটি আলাদা তিনটি পোস্ট কার্ডে লিখেছেন বড় মেয়ে মৌলিকে, ছোট মেয়ে স্মিতাকে এবং একমাত্র ছেলে অনন্য আজাদকে। অনুমান করা হয়, ওই লেখার অক্ষরগুলোই ছিল তার জীবনের শেষ লেখা।[২১] তাঁর মরদেহ কফিনে করে জার্মানি থেকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে ইসলামি প্রথায় জানাযার নামাজ শেষে তাঁর মরদেহ জন্মস্থান রাড়িখালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই ইসলামি প্রথায় সমাহিত করা হয়।
সমালোচনা
২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন সাঈদী জাতীয় সংসদে হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৩)বইটিকে ইসলাম বিরোধী আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেন এবং এ ধরনের লেখকদের লেখা বন্ধ করতে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই বইটিতে হুমায়ুন আজাদ তীব্র ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় বাংলাদেশের মৌলবাদীগোষ্ঠী স্বরূপ চিত্রিত করেন।
গ্রন্থতালিকা
·       অলৌকিক ইস্টিমার (১৯৭৩)
·       জ্বলো চিতাবাঘ (১৯৮০)
·       সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে (১৯৮৫)
·       যতোই গভীরে যাই মধু যতোই ওপরে যাই নীল (১৯৮৭)
·       আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে (১৯৯০)
·       কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু (১৯৯৮)
·       পেরোনোর কিছু নেই (২০০৪)
·       পুরস্কার এবং সম্মাননা
·       বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৬)
·       অগ্রণী পুরস্কার (১৯৮৬) - শিশু সাহিত্যের জন্য।
·       মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার (২০০৪)
·       একুশে পদক, (মরণোত্তর) (২০১২)



আপনার জ্ঞানপিপাসু বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে এই সম্পর্কে জানান

নাম

অনলাইন পরীক্ষা,1,অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ,3,অ্যাপ,3,আমাদের পরিবেশ,2,ইংরেজীকে সহজ করে ভাবুন,4,খাবার-পুষ্টি ও স্বাস্থ,2,গুগলের সাথে কিছুক্ষন,2,চলুন না ! ঐ দিকটায় একটু ডু মেরে আসি,1,ডাউনলোড অ্যাপ,3,প্রেজেন্টেশনের ময়না তদন্ত,3,বাংলা-বাঙালীর সাহিত্য,12,বাংলাদেশ,2,বাঙালী ও বাংলাদেশ,30,বাঙ্গালী ও বাংলাদেশ,1,বি সি এস-ই স্বপ্ন,14,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি,12,বিশ্ব যোগাযোগ,2,ব্যাংকিং পেশা IS PASSION,5,CV নিয়ে অল্প স্বল্প,2,Viva সমাচার,4,
ltr
static_page
ইচ্ছে: হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদ
একজন বাংলাদেশি কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনীতিক ভাষ্যকার।
ইচ্ছে
https://aamaricche.blogspot.com/p/humayun-azad.html
https://aamaricche.blogspot.com/
https://aamaricche.blogspot.com/
https://aamaricche.blogspot.com/p/humayun-azad.html
true
4366569560520032408
UTF-8
সবগুলি লেখা দেখুন কোনো লেখা খুঁজে পাওয়া যায় নি ! সব দেখতে আরো পড়ুন মন্তব্য মন্তব্য বাতিল করুন মুছুন দ্বারা হোম বাকি অংশটুকু পোস্ট সব দেখতে আপনার জন্য আরো লেখা সহজেই খুঁজুন ইচ্ছে আর্কাইভ খুঁজুন সবগুলি লেখা দুঃখিত ! আপনার ইচ্ছেটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুক্ষন পর আবার চেষ্টা করুন। অথবা ইচ্ছে তে যান রবিবার সোমবার মঙ্গলবার বুধবার বৃহস্পতিবার শুক্রবার শনিবার রবিবার সোমবার মঙ্গলবার বুধবার বৃহস্পতিবার শুক্রবার শনিবার জানুয়ারি ফেব্রুয়ারী মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টেম্বর অক্টোবর নভেম্বর ডিসেম্বর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারী মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টেম্বর অক্টোবর নভেম্বর ডিসেম্বর এই মাত্র ১ মিনিট আগে $$1$$ মিনিট আগে ১ ঘন্টা আগে $$1$$ ঘন্টা আগে গতকাল $$1$$ দিন আগে $$1$$ সপ্তাহ আগে ৫ সপ্তাহ এর বেশি আগে ফোলোয়ার ফোলো অবশিষ্টাংশ প্রিমিয়াম সম্পূর্ণ পোস্ট দেখতে Facebook এ শেয়ার করে Like করুন সবগুলি কোড কপি করতে সবগুলি কোড সিলেক্ট করতে সবগুলি কোড কপি হয়েছে আপনার ক্লিপ বোর্ডে Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy