আপনার জন্য আরো লেখা
বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশ গণপরিষদে (বর্তমানে জাতীয় সংসদ ) এই সংবিধান গৃহীত হয় এবং একই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর বা বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকী হতে এটি কার্যকর হয়। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ষোড়াশ সংশোধনীসহ এটির মোট ১৬ বার সংশোধন করা হয়েছে। তবে এসব সংশোধনীর মধ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পঞ্চম সংশোধনী, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সপ্তম সংশোধনী এবং ত্রয়োদশ সংশোধনী সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক বাতিল করা হয়েছ। এই সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদ সদস্যদের মোট সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়।সংবিধান সংশোধনের জন্য ৭ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে অনুমোদন দিতে হয়। সংবিধানের ১৪২ ধারা বলে এই সব সংশোধনী সমূহ আনা হয়েছে।
প্রথম সংশোধনী আইন:
সংবিধান আইন, ১৯৭৩ (প্রথম সংশোধনী), গৃহীত হয় ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৭ জুলাই ১৯৭৩। এ সংশোধনী আনীত ও গৃহীত হওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হল ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা গণহত্যাজনিত অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতা বিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিল তাদের বিচারের জন্য সরকারকে উপযুক্ত ক্ষমতা প্রদান। এটি পূর্বে সংবিধানে এমনকি প্রচলিত অন্য কোন আইনেও ছিল না। এ লক্ষ্যে সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের সাথে ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ যোগ করা হয় এবং ৪৭(ক) নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয। ৪৭(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে যুদ্ধ অপরাধীদের আইনের আশ্রয়, প্রকাশ্য বিচার সুপ্রীম কোর্টে মামলা দায়ের করার অধিকার প্রভূতি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। উত্থাপনকারী আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর।
দ্বিতীয় সংশোধনী আইন:
সংবিধান আইন,১৯৭৩ (দ্বিতীয় সংশোধনী) গৃহীত হয়১৯৭৩ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর,রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা বাড়ানো হয়, নিবর্তনমূলক আটক এবং রাষ্ট্রপতিকে যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ বা দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার ক্ষমতা প্রদান করা হয় এবং মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মামলা করার অধিকারও হিত করা হয়। প্রধানত এই সংশোধনী দেশের নাগরিকদের বিনা বিচারে আটকের বিধান, মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার বিধান এবং সংসদ অধিবেশন ৬০ দিনের বদলে ১২০ দিনের মধ্যে আহ্বান করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। এই সংশোধনীর ফলে (১) সংবিধানের ২৬, ৬৩, ৭২ ও ১৪২ নং অনুচ্ছেদ সংশোধিত হয়; (২) ৩৩ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হয়, এবং (৩) সংবিধানে একটি নতুন ভাগ, যথা ভাগ ৯ক সংযুক্ত হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে জরুরি অবস্থাকালীন সময়ে নাগরিকদের কতিপয় মৌলিক অধিকার স্থগিত করা হয়। উত্থাপনকারী আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর।
তৃতীয় সংশোধনী আইন:
সংবিধান আইন, ১৯৭৪ (তৃতীয় সংশোধনী) বলবৎ হয় ১৯৭৪ সালের ২৩শে নভেম্বর এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৭৪ সালের ২৭শে নভেম্বর। এ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৬ মে, ১৯৭৪ এ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত দিল্লী চুক্তির বৈধতা দেয়া হয়েছে। দিল্লী চুক্তির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সীমানা ১৫টি স্থানে রদবদল করতে হয়েছে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশকে দহগ্রাম আঙ্গুরপোতা ও ভারতকে বেরুবাড়ী হস্তান্তর এবং ২৫ বছর মেয়াদী ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তির সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়। এতে সংবিধানের ২(ক) উপ-অনুচ্ছেদটি সংশোধন করা হয়। উত্থাপনকারী আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর।
চতুর্থ সংশোধনী আইন
সংবিধান আইন ১৯৭৫ (চতুর্থ সংশোধনী) গৃহীত হয় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ২৫ জানুয়ারি। এই সংশোধনীর দ্বারা সংবিধানে কতিপয় বড় পরিবর্তন আনা হয়। সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়; বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থলে আনা হয় একদলীয় ব্যবস্থা; জাতীয় সংসদের কতক ক্ষমতা খর্ব করা হয়; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অনেকটা খর্ব হয়; সুপ্রিম কোর্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ রক্ষা ও প্রয়োগের এখতিয়ার থেকে বঞ্চিত হয়। এই আইন দ্বারা (১) সংবিধানের ১১, ৬৬, ৬৭, ৭২, ৭৪, ৭৬, ৮০, ৮৮, ৯৫, ৯৮, ১০৯, ১১৬, ১১৭, ১১৯, ১২২, ১২৩, ১৪১ক এবং ১৪৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়; (২) ৪৪, ৭০, ১০২, ১১৫ ও ১২৪ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করা হয়; (৩) সংবিধানের তৃতীয় ভাগ সংশোধন করা হয়; (৪) তৃতীয় তফসিলের পরিবর্তন করা হয়; ও চতুর্থ তফসিলের ১২ অনুচ্ছেদ বিলপ্ত করা হয়। (৫) প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়; (৬) রাষ্ট্রপতির পদ ও এই পদের প্রার্থী সম্পর্কে বিশেষ বিধান করা হয়; (৭) সংবিধানে একটি নতুন (একাদশ) ভাগ সংযুক্ত করা হয়; এবং (৮) সংবিধানে ৭৩ক ও ১১৬ক অনুচ্ছেদ দুটি সংযুক্ত করা হয়। উত্থাপনকারী আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর।
পঞ্চম সংশোধনী আইন:
এই সংবিধান আইন জাতীয় সংসদে অনুমোদিত হয় ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল। এই আইন দ্বারা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের সংশোধন করা হয় এবং তাতে ১৮ প্যারাগ্রাফ নামে একটি নতুন প্যারাগ্রাফ যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখসহ ওই দিন থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত (ওই দিনসহ) সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের যে কোনো ঘোষণা বা আদেশ বলে সম্পাদিত সংবিধানের সকল সংশোধনী, সংযুক্তি, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন ও বিলুপ্তি বৈধভাবে সম্পাদিত বলে বিবেচিত হবে এবং কোনো কারণেই কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে এসবের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। এ সংশোধনীর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হল :
- সংবিধানে প্রারম্ভে প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করা হয।
- ৪টি মূলনীতির ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের পরিবর্তে ‘সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ এবং ‘সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার অর্থে ‘সমাজতন্ত্র’ প্রতিস্থাপন করা হয়।
- সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘মুক্তিসংগ্রাম’ শব্দগুচ্ছের পরিবর্তে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ’ শব্দগুচ্ছ সন্নিবেশিত করা হয়।
- ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ এর বৈধতা দেয়া হয়।
- এদেশের জনগণের নাগরিক পরিচয় ‘বাংলাদেশী’ বলে নির্দিষ্ট করা হয। উত্থাপনকারী সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান।
ষষ্ঠ সংশোধনী আইন:
১৯৮১ সালের সংবিধানের ৫১ ও ৬৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ কর্তৃক এই আইন কার্যকর হয় ১৯৮১ সালের ৮ই জুলাই এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৮১ সালের ৯ই জুলাই।এ সংশোধনী ছিল উপ-রাষ্ট্রপতি পদ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের বিধান নিশ্চিতকরণ। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাষ্ট্র-ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনের জন্য এ সংশোধনী আনা হয। সংবিধানের ৫০ ও ৬২(২) অনুচ্ছেদের বিধানমতে রাষ্ট্রের লাভ জনক পদে আসীন কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সংবিধানের ৬২(২) (ক) ধারা সংযোজন করার মাধ্যমে তা সংশোধন করা হয, যেখানে বলা হয়েছে যে কেউ রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী হওয়ার কারনে প্রজাতন্ত্রের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলে গণ্য হবেন না। এর মাধ্যমে উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। উত্থাপনকারী সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান।
সপ্তম সংশোধনী আইন:
১৯৮৬ সালের ১০ই নভেম্বর এই আইন পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৮৬ সালের ১০ই নভেম্বর। এই আইন দ্বারা সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়; এর দ্বারা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের সংশোধন করা হয় এবং তাতে ১৯ প্যারাগ্রাফ নামে একটি নতুন প্যারাগ্রাফ যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয় যে, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তারিখসহ ওই দিন থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত (ঐ দিনসহ) সময়কালের মধ্যে গৃহীত সকল ঘোষণা, ঘোষণা আদেশ, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ, সামরিক আইন বিধানাবলি, সামরিক আইন আদেশসমূহ, সামরিক আইন নির্দেশনাসমূহ, অধ্যাদেশসমূহ এবং অন্যান্য আইন বৈধভাবে সম্পাদিত বলে বিবেচিত হবে এবং কোনো কারণে এসবের বিরুদ্ধে কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না এবং এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ‘বাষট্টি’ শব্দটির পরিবর্তে ‘পয়ষট্টি’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হয়। উত্থাপনকারী আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বিচারপতি কে এম নুরুল ইসলাম।
অষ্টম সংশোধনী আইন:
১৯৮৮ সালের ৭ জুন এই সংশোধনী আইন পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৮৮ সালের ৯ই জুন । এর দ্বারা সংবিধানের ২, ৩, ৫, ৩০ ও ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। এই সংশোধনী আইনবলে (১) ইসলাম প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষিত হয়; তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে। (২) ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বিভাগের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়; (৩) সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদে Bengali শব্দটি পরিবর্তন করে Bangla করা হয় এবং Dacca পরিবর্তন করে Dhaka করা হয়; (৪) সংবিধানের ৩০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমতি ছাড়া এদেশের কোনো নাগরিক কর্তৃক কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের প্রদত্ত কোনো খেতাব, সম্মাননা, পুরস্কার বা অভিধা গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়। এই সংশোধনী সেই বাধা দূর করেছে। (৫) সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপন করে বলা হয় যে রংপুর, যশোর, কুমিল্লা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে। প্রধান বিচারপতি প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারককে মনোনয়ন দিয়ে প্রতিটি বেঞ্চে পাঠাবেন। উল্লেখ্য যে, শেষোক্ত পরিবর্তনটি ১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদের সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে, কারণ তার দ্বারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তিত হয়েছে। উত্থাপনকারী সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
নবম সংশোধনী আইন:
সংবিধান আইন ১৯৮৯ (নবম সংশোধনী) পাস হয় ১৯৮৯ সালের ১০ই জুলাই জুলাই এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৮৯ সালের ১১ই জুলাই ১৯৮৯। এই সংশোধনী দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির পদে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের বিধান করা হয়; রাষ্ট্রপতির পদে একই ব্যক্তির দায়িত্ব পালন পর পর দুই মেয়াদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয় (প্রতি মেয়াদকাল ৫ বছর) এবং বিভিন্ন প্রেসিডেন্সিয়াল নিয়ম-কানুন জারি করা হয়েছে। এই সংশোধনীতে আরও বলা হয় যে, শূণ্যতা সৃষ্টি হলে একজন উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা যেতে পারে, তবে সেই নিয়োগের পক্ষে জাতীয় সংসদের অনুমোদন আবশ্যক হবে। অবশ্য দ্বাদশ সংশোধনীর পর এ সংশোধনীর কার্যকারিতা আর নেই। উত্থাপনকারী সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
দশম সংশোধনী আইন:
১৯৯০ সালের ১২ জুন দশম সংশোধনী আইন পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৯০ সালের ২৩শে জুন । এর দ্বারা, অন্যান্যের মধ্যে, সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষণের বিধান করা হয়, যেসব আসনে নারীরা নির্বাচিত হবেন সংসদ সদস্যদের ভোটে।এছাড়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত খুটিনাটি এতে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া সংবিধানের ইংরেজী ও বাংলা ভাষ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত যে অসঙ্গতি ছিল তা দূর করা হয়। উত্থাপনকারী আইন ও বিচারমন্ত্রী হাবিবুল ইসলাম।
একাদশ সংশোধনী আইন:
এই আইন পাস হয় ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৯১ সালের ১০ই আগস্ট। এ আইনবলে সংবিধানের চতুর্থ তফসিল সংশোধন করা হয় এবং তাতে ২১ নং নতুন প্যারাগ্রাফ সংযুক্ত করা হয়; এই প্যারাগ্রাফ বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি পদে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নিয়োগ ও শপথ গ্রহণ এবং ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তাঁর নিকট রাষ্ট্রপতি এইচ.এম এরশাদের পদত্যাগ পত্র পেশ, এবং নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস কর্তৃক ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণকে বৈধতা দান করে। এই সংশোধনী আইন ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর সময়কালের মধ্যে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে উপ-রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রয়োগকৃত সকল ক্ষমতা, প্রবর্তিত সকল আইন ও অধ্যাদেশ, জারিকৃত সকল আদেশ ও আইন এবং গৃহীত সকল পদক্ষেপ ও কার্যপ্রণালীকে অনুমোদন দেয়, নিশ্চিত করে ও বৈধতা দেয়। এই আইন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের পূর্ববর্তী পদ, অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদে প্রত্যাবর্তনকে সম্ভব করে ও এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়। উত্থাপনকারী আইন ও বিচারমন্ত্রী মীর্জা গোলাম হাফিজ।
দ্বাদশ সংশোধনী আইন:
বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিকাশের ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে খ্যাত এই সংশোধনী আইন পাস হয় ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৯১ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর। এর দ্বারা সংবিধানের ৪৮, ৫৫, ৫৬, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৭০, ৭২. ১০৯, ১১৯, ১২৪, ১৪১ক এবং ১৪২ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পুনঃপ্রবর্তন ঘটে; রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান হন; প্রধানমন্ত্রী হন রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী; প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ জাতীয় সংসদের কাছে দায়বদ্ধ হয়; প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এর মাধ্যমে উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত হয়, সকল নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীসভার হাতে ন্যাস্ত হয়। সংসদের দুটি অধিবেশনের মধ্যকার বিরতি ৬০ দিন নির্ধারণ করা হয। জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা হয়। তাছাড়া, সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এই আইনে স্থানীয় সরকার কাঠামোতে জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়, যা দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করে। উত্থাপনকারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন:
সংবিধান আইন ১৯৯৬ (ত্রয়োদশ সংশোধনী) পাস হয় ১৯৯৬ সালের ২৭শে মার্চ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৯৬ সালের ২৮শে মার্চ। এ সংশোধনীর ফলে সংবিধানে আনীত এ বিষয়গুলো ব্যাপক এবং বিস্তারিত। এ সংশোধনীর মাধ্যমে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান করা হয়, যা একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন হিসেবে কাজ করবে এবং সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সর্বতোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। একজন প্রধান উপদেষ্টা ও অনূর্ধ্ব ১০ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে গঠিতব্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমষ্টিগতভাবে রাষ্ট্রপতির নিকট দায়বদ্ধ থাকবে এবং নতুন সংসদ গঠনের পর নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের তারিখে বিলুপ্ত হবে। উত্থাপনকারী আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী জমির উদ্দিন সরকার।
চতুর্দশ সংশোধনী আইন:
সংবিধান আইন ২০০৪ (চতুর্দশ সংশোধনী) পাস হয় ২০০৪ সালের ১৬ মে এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ২০০৪ সালের ১৭মে। এই সংশোধনী দ্বারা অপরাপর বিষয়ের সঙ্গে নিম্নোক্ত বিধান সংযোজন করা হয়: জাতীয় সংসদে পরবর্তী দশ বছরের জন্য মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৩০ থেকে ৪৫-এ বর্ধিতকরণ; সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসরগ্রহণের বয়স ৬৫ বছরের স্থলে ৬৭ বছর নির্ধারণ; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অফিসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং সকল সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার অফিস এবং বিদেশে কুটনৈতিক মিশনে প্রধানমন্ত্রীর ছবি প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়।উত্থাপনকারী আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইন:
সংবিধান আইন ২০১১ (পঞ্চদশ সংশোধনী) পাস হয় ২০১১ সালের ৩০শে জুন এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ২০১১সালের ৩রা জুলাই। এই সংশোধনী দ্বারা সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয় এবং রাষ্টীয় মুলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতিও দেয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়, জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়। সংবিধানে ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭ (ক) ও ৭ (খ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সংবিধান বহির্ভূত পন্থায় রাষ্টীয় ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করা হয়।উত্থাপনকারী আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ।
ষোড়শ সংশোধনী আইন:
সংবিধান আইন ২০১৪ (ষোড়শ সংশোধনী) পাস হয় ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এবং ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এই সংশোধনী দ্বারা সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের সংশোধন করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের দফা (২), (৩), (৪), (৫), (৬), (৭), ও (৮) এর পরিবর্তে নিন্মরূপ দফা (২), (৩) ও (৪) প্রতিস্থাপিত হয়, যথা : “অনুচ্ছেদ ৯৬(২) প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোন বিচারককে অপসারিত করা যাবে না। অনুচ্ছেদ ৯৬(৩) এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। অনুচ্ছেদ ৯৬(৪) কোন বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করতে পারবে।” উত্থাপনকারী আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।