আপনার জন্য আরো লেখা
অন্যের প্রেজেন্টেশন দেখতে গেলে আপনি যেমন দুই-তিন মিনিটেই বিরক্ত হয়ে যান, আপনার প্রেজেন্টেশন দেখলেও তাদের এই ফকিরা মার্কা ফিলিংসটা হয়।
১. স্লাইডে থাকবে কোন একটা বিষয়ের বুলেট পয়েন্ট সহ Hints। যাতে ঐসব Hints দেখলে আপনি ওই পয়েন্ট নিয়ে দুই-তিন লাইন কথা বলতে পারেন। প্রেজেন্টেশনের আগের রাত্রে রিপোর্ট থেকে লম্বা লম্বা লাইন Copy-Paste মেরে স্লাইড বানানো যাবে না। আপনি যাদের সামনে প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন তারা সবাই পড়তে জানে। তাই, একটা স্লাইডের মধ্যে আজাইরা লেখা দিয়ে রোবটের মত শুধু Reading পড়া যাবে না।
২. অবশ্যই কোন স্লাইডে ৫ টার বেশি বুলেট পয়েন্ট দেয়া যাবে না। আর কোন পয়েন্টে পাঁচটার বেশী শব্দ না থাকা ভাল।
৩. মনে রাখা জরুরি, আপনার সামনে দর্শক যারা থাকবে, তারা কি কি শুনতে চায়, তাদের কি জানা প্রয়োজন, সেটা বলার জন্য আপনার প্রেজেন্টেশন। শুধু আপনার পছন্দের জিনিস নিয়ে ইচ্ছামত বলা শুরু করলে দেখবেন পাঁচ মিনিটেই পাবলিক ঘুমায় পড়ছে।
৪. কোন একটা নিউজের HeadLine Interesting হইলে আমরা link এ গিয়ে সেই নিউজ দেখি। নইলে ক্লিক করি না। আপনার প্রেজেন্টেশনের Title বা agenda বা প্রথম দুই স্লাইড Interesting না হইলে, আপনি কি বলতেছেন কারো কানে ঢুকবে না। টেবিলের নিচে মোবাইলে Facebooking করতে থাকবে। আর Audience এর ইন্টারেস্ট ধরে রাখার জন্য একটু পর পর আকর্ষণীয় কিছু শব্দ জোড়সে বলা লাগবে। স্টিভ জবসও কিছু শব্দ ব্যবহার করত- Incredible, Stunning, Fantastic, Gorgeous, etc.
৫. হিজিবিজি মার্কা কোন চার্ট দিবেন না, যেটা আপনি নিজেই ঠিক মত বুঝেন না। বেশি কমপ্লেক্স কোন চার্ট দেয়ার Risk হচ্ছে, কেউ প্রশ্ন করলে ধরা খেয়ে যাবেন। এমনকি স্লাইডে এমন কোন কিছু দেয়া উচিত না যেটা নিয়ে প্রশ্ন করলে আপনি ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না। ধরা খাইলে মানসম্মান নিয়ে টানাটানি লেগে যাবে।
৬. মিনি মিনি টেক্সট বা খুব বড় ফন্ট দিবেন না। ফন্ট সাইজ ২৪ হইলে ভালো। ১৮ এর কম বা ৪০ এর বেশি দিবেন না। Times New Roman ফন্ট হিসেবে ব্যবহার না করে Tahoma, Georgia ব্যবহার করতে পারেন। তবে ইয়ো ইয়ো মার্কা ফন্ট থেকে দূরে থাকবেন।
৭. নতুন নতুন প্রেজেন্টেশন শিখলে অনেকেই অপ্রয়োজনীয় Animation দেয়, এক এক শব্দ এক এক দিক লাফাইতে লাফাইতে আসে। এই রকম করলে, প্রেজেন্টেশনের মূল বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেয়া কষ্টকর হয়ে যায়। Simple Animation ব্যবহার করবেন, সেক্ষেত্রে বুঝানো অনেক সহজ হয়ে যায়।
৮. অনেকেই সময় মত প্রেজেন্টেশন শেষ করতে পারে না। শেষের দিকে এসে এক মিনিটে ত্রিশ স্লাইড লাফ মারে। আগে থেকে Practice করে গেলে এবং প্রশ্ন উত্তরের জন্য কিছু সময় বরাদ্ধ রাখলে এই সমস্যা কম হয়।
৯.কোন একটা জিনিসের কালার ল্যাপটপে যতই ভালো দেখাক না কেনো, প্রজেক্টরে ফালতু দেখাবেই। গ্যারান্টি। স্পেশালি Background Color। তাই খুব বেশি কালারের Shade নিয়ে গবেষণা না করে, Basic Color ব্যবহার করেন। পারলে আগে ভাগে Projector এ গিয়ে প্রেজেন্টেশন চালায় দেখেন কালারগুলার কি অবস্থা।
১০. প্রেজেন্টেশন দেয়া একটা Story বলার মত। একটা Flow থাকবে। মাঝখানে ক্লাইম্যাক্স থাকবে। প্রবলেম থাকবে। সেটার ফিনিশিং দিবেন, লাস্টে। এইভাবে Flow ঠিক না থাকলে, প্রেজেন্টেশনের মাঝখানে লোকজন ঘুমায় পড়বে।
১১. প্রেজেন্টেশন দিতে গেলে দুনিয়ার সবাই নার্ভাস থাকে। বুকের ভিতর দুরু দুরু করতে থাকে। এক এক জন এক এক সিস্টেমে নার্ভাসনেস দূর করার চেষ্টা করে। আপনিও করুন আপনার পছন্দের উপায়ে ।
১২. প্রেজেন্টেশন Effective করার জন্য Contentএর চাইতে Body Language বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পকেটের ভিতরে বা বুকে হাত শক্ত করে রাখবেন না। দুই সাইডে রাখবেন এবং একটু পর পর হাত নাড়াবেন। এক জায়গায় স্থির না থেকে একটু ডাইনে বামে নাড়াচাড়া দিবেন। ইত্যাদি এর হানিফ সংকেত দাড়িয়ে যখন কথা বলতে তখন সাউন্ড অফ করে দেখবেন তার হাত পা নাড়ানোর স্টাইল, মুখের ভঙ্গি। এইসব। আর অবশ্যই পকেট হান্ডেড পার্সেন্ট খালি রাখতে হবে। কোন মোবাইল, মানি ব্যাগ, চাবি রাখা যাবে না।
১৩. মরার মত একই স্বরে কথা বলবেন না। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে চাইলে সেটার আগে দম নিয়ে উচ্চস্বরে বলতে হবে, তাইলে যারা শুনতেছে তাদের মনোযোগ বাড়বে। টিভিতে খবর শুনার সময় টিভির দিকে না তাকিয়ে শুধু অডিও শুনলে বুঝতে পারবেন যারা খবর পড়ে তারা কখন কোন শব্দের উপর জোর দিয়ে খবরগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
১৪. দর্শকদের পশ্চাদদেশ দেখিয়ে সারাক্ষণ প্রোজেক্টরের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। ওরা আপনাকে দেখতে আসছে, আপনার পিছনের অংশ না। আবার সর্বদা ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকেও তাকিয়ে কথা বলবেন না। একটু পর পর দর্শকদের দিকে তাকান। আই কন্ট্রাক্ট করেন। সেটা মোটামুটি ৩ সেকেন্ড পরে সরায় ফেলেন। এবং দুই-এক মিনিট পরে আরেকজনের সাথে Eye-Contact করেন।
১৫. আ, উ, গাই, গুই, লাইক, আই মিন, ইউ নো, এইসব টাইপের শব্দ করে অনেকেই। এইসব শব্দ করে, মনে করার চেষ্টা করে, পরবর্তীতে কি বলবে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, নিজের অজান্তেই আমরা এইসব শব্দ করি। এইগুলাকে বলে ফিলার ওয়ার্ড। প্রেজেন্টেশন প্রাকটিস করলে, এইসব ফিলার ওয়ার্ড কমে যায়। আবার অনেকের মুদ্রাদোষ থাকে, একই শব্দ বার বার বলে, প্রাকটিস করে সেটাও কমানো যায়। আর কখনো মনে করার দরকার হইলে, এক দুই সেকেন্ডের জন্য দম নিবেন এবং চুপ থেকে চিন্তা করবেন। এই বিরতি লম্বা সময়ের জন্য নেয়া যাবেনা।
১৬. প্রেজেন্টেশনে কারা থাকবে তারা আপনি যে জিনিস নিয়ে কথা বলবেন সেটা কতটুকু জানে, তা আগে থেকেই জেনে নিতে হবে। নইলে ওরা জানে এমন কিছু নিয়ে আপনি অনেক সময় বকবক করে বোরর্ড করে ফেলবেন। আবার উল্টাটাও ঘটতে পারে, ওদের তেমন ধারণা নাই, আর আপনি ব্যাকগ্রাউন্ড কোন ধারণা না দিয়েই মেইন পয়েন্টে চলে গেলেন। তারা আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না।
১৭. আপনার প্রেজেন্টেশন তৈরী করার সময়, আপনার প্রেজেন্টেশনের মেইন তিনটা ইম্পরট্যান্ট পয়েন্ট খুঁজে বের করতে হবে। যেই তিনটা পয়েন্ট আপনি মনে করেন ওদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের মনে রাখা উচিত। সেই তিনটা পয়েন্ট আপনার প্রেজেন্টেশনের প্রথমে, মাঝে ও শেষে রাখতে হবে। এবং শেষ স্লাইডে এই তিনটার একটা Summary স্লাইড রাখতে হবে। এই Important জিনিসগুলা বলার সময় গলার স্বরের ভেরিয়েশন এনে একটু জোড়ে বলতে হবে। যাতে দর্শক আকর্ষণ অনুভব করে।
১৮. কেউ যদি প্রশ্ন করে বসে এবং সেটার উত্তর মনে করার জন্য আপনার কিছুক্ষণ চিন্তা করা দরকার হইলে, উনাকে বলেন, প্রশ্নটা রিপিট করতে। তাইলে প্রশ্নের উত্তর হিসেবে কি বুজুংবাজুং দিবেন সেটা ঠিক করতে এক দেড় মিনিট এক্সট্রা সময় পেয়ে যাবেন।
১৯. শেষকথা, Practice makes a man perfect ! দরকার হইলে ভিডিও ক্যামেরা বা ওয়েবক্যাম দিয়ে আপনার প্রেজেন্টেশনের ভিডিও করেন। তারপর সাউন্ড অফ করে দেখেন, Body Language কি অবস্থা। চোখ বন্ধ করে শুধু অডিও শুনে, চেক করেন উচ্চারণের ভেরিয়েশন আছে নাকি। কথা বলার Flow আকর্ষণীয় হচ্ছে কিনা। Practice এর কোন বিকল্প আজও খুজে পাওয়া যায় নি।