আপনার জন্য আরো লেখা
১৯৭৬ সালঃ
৯শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে তাঁকে পুনরায় সেনাবাহিনীর চীফ অফ আর্মী স্টাফ পদে দায়িত্বে প্রত্যাবর্তন করা হয় এবং উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
১৯৭৭ সালঃ
১৯৭৭ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি একুশের পদক প্রবর্তন করেন এবং ২১শে এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন জিয়া দেশে আবার গণতন্ত্রায়ণের উদ্যোগ নেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র চালুর সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৭৮ সালঃ
১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। এই নির্বাচনে মোট ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, এ নির্বাচনে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। ২ জনের মনোনয়নপত্র বাছাই এ বাদ পড়ায় বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা ৯ জন। ১ জন আপীল দাখিল করায় ও তাঁর আপীল গৃহীত হওয়ায় এবং কোন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা ১০ জন ছিল। এরপর জিয়াউর রহমান মে মাসে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা এবং আস্থা যাচাইয়ের জন্য ৩০শে মে গণভোট অনুষ্ঠান ও হাঁ-সূচক ভোটে বিপুল জনসমর্থন লাভ করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়া এই দলের চেয়ারপারসন (ঈযধরৎঢ়বৎংড়হ)। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন।
১৯৮১ ও ১৯৮২ সালঃ
১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। এই নির্বাচনে মোট ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, এ নির্বাচনে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। ২ জনের মনোনয়নপত্র বাছাই এ বাদ পড়ায় বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা ৯ জন। ১ জন আপীল দাখিল করায় ও তাঁর আপীল গৃহীত হওয়ায় এবং কোন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা ১০ জন ছিল। এরপর জিয়াউর রহমান মে মাসে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা এবং আস্থা যাচাইয়ের জন্য ৩০শে মে গণভোট অনুষ্ঠান ও হাঁ-সূচক ভোটে বিপুল জনসমর্থন লাভ করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়া এই দলের চেয়ারপারসন (ঈযধরৎঢ়বৎংড়হ)। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন।
১৯৮১ ও ১৯৮২ সালঃ
৩০ মে ১৯৮১, জিয়ার হত্যা কান্ডের সেই মর্মান্তিক ঘটনা। ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ, স্বৈরাচারী এরশাদের ক্ষমতা দখল ৩০ মে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর, এরশাদের রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন।
১৯৮৩ সালঃ
১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সাল নাগাদ তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। ঐ দিন তিনি দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ.এফ.এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন। এরশাদ দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন ।
১৯৯০ সালঃ
বাংলাদেশের গত ৪২ বছরের রাজনীতিতে 'জোটের রাজনীতি' প্রথম দিকে গুরত্ব না পেলেও,- ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান ও '৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই এ 'জোট রাজনীতি'র গুরুত্ব পেয়েছে বেশি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমনই যে কোনো একটি একক দলের পক্ষে সরকার পরিচালনা করা সম্ভ নয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো যখন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তখন প্রথমবারের মতো মুসলিম লীগ ও সদ্যগঠিত ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ একটি সংসদীয় ঐক্য গঠন করলেও, পরে সে ঐক্য টিকে থাকেনি। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী প্রথমবারের মতো ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগের ব্যানারে সংগঠিত হয়েছিল এবং সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিল।
১৯৯১ সালঃ
কিন্তু সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোটের রাজনীতি শুর হয়েছিল ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে।জোটের রাজনীতি যদি পর্যালোচনা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের রাজনীতি স্পষ্টই দুটি ধারায় বিভক্ত। যারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ তথা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী তাদের একটি জোট। এ জোটের মূল্য শক্তি বিএনপি। এ জোট চারদলীয় জোট হিসেবে পরিচিতি পেলেও অতি সম্প্রতি তা ১৮ দলীয় জোটে সম্প্রসারিত হয়েছে। যদিও এ ১৮ দলীয় জোটে অনেক দল রয়েছে, যা ব্যক্তিনির্ভর, প্যাডসর্বস্ব এবং যাদের কোনো সংসদীয় ভিত্তি নেই। অন্যদিকে যারা বাঙালি সংস্কৃতি, ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে বিশ্বাসী এবং সমাজতন্ত্রী, তারা মহাজোটের ব্যানারে সংগঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ এ মহাজোটের অন্যতম রাজনৈতিক শক্তি। তবে এখানে একটা মজার ব্যাপার লক্ষণীয়।
রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী জাতীয় মার্টি মহাজোটের অন্যতম শরিক। জাতীয় পার্টি বাঙালি জাতীয়তাবাদ তথা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তাদের রাজনীতির সঙ্গে বিএনপির রাজনীতির কোনো বড় পার্থক্য নেই। এ ক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে তাদের ঐক্য করা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো যারা বিএনপির মতাদর্শের সম্পর্কে বিপরীত মেরুতে, তাদের সঙ্গেই ঐক্য করেছে জাতীয় পার্টি। এর ব্যাখ্যা কী? সাধারণ অর্থে দেখা যায় একধরনের সুবিধাবাদিতা কাজ করেছে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের মাঝে। এরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে সব ধরনের সুবিধা নিতে চান। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির আওয়ামী লীগকেন্দ্রিক রাজনীতি করার প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করি। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে (১৯৯৬) আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে, জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল। পরে জাতীয় পার্টির নেতা এইচ এম এরশাদ দলীয় মন্ত্রীকে (আনোয়ারা হোসেন মঞ্জু) পদত্যাগ করার আহ্বান জানালেও, তিনি পদত্যাগ করেননি। এ নিয়ে ওই সময় জাতীয় পার্টি ভেঙেও যায়।
এ মুহূর্তে জাতীয় পার্টি তিন ধারায় বিভক্ত হয়ে আছে-
একটি ধারা (প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জু) বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে আছে এবং সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্বও রয়েছে (বিজেপি)।জোট রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করলে সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশে সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাস আলোচনা করা প্রয়োজন।
- ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার আওতায়।
- ১৯৭৯ থেকে '৯১ সাল পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকার পদ্ধতির অধীনে।
- '৯৬ থেকে সর্বশেষ ২০০৮ সালের পর চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায়।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩ঃ
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ই মার্চ, ১৯৭৩ সালে। ওই সময় কোনো জোটের রাজনীতি ছিল না এবং ইসলামপন্থী কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব ও অংশগ্রহণ ছিল না।- মোট ৩০০ আসনে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছিল ২৯২টিতে। শতকরা ভোট পেয়েছিল ৭৩ দশমিক ২০ ভাগ।
- ন্যাপ (মো.) ২২৪ আসনে প্রার্থী দিয়ে পেয়েছে মাত্র ১টি (শতকতরা ভোট ৮.৩৩)। আর
- জাসদ ২৩৭ আসনে প্রার্থী দিয়েও পেয়েছিল ১টি (শতকরা ৬.৫২)।
- ভাসানী ন্যাপও ১৬৯ আসনে প্রার্থী দিয়ে ১টি আসন (শতকরা ৫.৩২ ভাগ ভোট) পেয়েছিল।
- স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছিল ৪টি আসন।
ওই সময় বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল জাসদ, ন্যাপ (মো.), যারা এখন সরকারি জোটের অন্যতম শরিক।
স্বাধীনতা আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা, শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ইত্যাদি নানা কারণে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী হতে সাহায্য করলেও, ওই সময় কোনো কোনো আসনে কারচুপির অভিযোগও উঠেছিল। ওই সময় কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জোট গঠনের কথা না বললেও, নির্বাচনের পর পরই (ন্যাপ-মো.) ও কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা, যারা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনীতির সমর্থক ছিলেন, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার আহ্বান জানান।
'৭৩ সালের মে মাসে ৩টি সংগঠনের (আওয়ামী লীগ, সিপিবি ও ন্যাপ-মো.) ছাত্র সংগঠনগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গঠন করে। ধীরে ধীরে তা রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর দিক গড়ায়। ৫ আগস্ট, ১৯৭৩ কুমিল্লায় ও ২৬ আগস্ট বগুড়ায় ত্রিদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। সেপ্টেম্বরে সরকার ঘোষণা করে যে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিকে সামনে রেখে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে নিয়ে একটি ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হবে। অক্টোবরে বহুল আলোচিত 'গণঐক্যজোট' গঠিত হয়। ১৯ সদস্যবিশিষ্ট যে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তাতে ১১ জন ছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে, ৫ জন ন্যাপ (মো.) আর ৩ জন সিপিবি থেকে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এ সিদ্ধান্তকে অভিবাদন জানিয়েছিল। এ গণঐক্যজোটের সম্প্রসারিত রূপ ছিল 'বাকশাল'। যদিও বলার অপেক্ষা রাখে না যে এ জোট সংসদীয় নির্বাচনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৯ঃ
কেননা নির্বাচন হয়েছিল এর আগে, মার্চে।বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি 'নয়া রাজনীতির' আলোকে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে (১৯৭৯) আমরা এই গণঐক্যজোটের কোনো প্রতিফলন লক্ষ্য করিনি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পৃথকভাবে আবদুল মালেক উকিল ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে অংশ নেয়। এমনকি ন্যাপ (মো.) একতা পার্টি, জাসদ, যারা একসময় মিত্র ছিল আওয়ামী লীগের, তারাও আলাদাভাবে নির্বাচন করে।
- নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জয় লাভ করে; তারা জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২০৭টি আসন লাভ করে।
- আওয়ামী লীগের মালেক গ্রুপ ২৯৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয় ৫৪টিতে (ভোটের হার ২৪.৫৬ ভাগ) আর
- মিজান গ্রুপ ১৮৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয় মাত্র ২টিতে (০.৬৬ ভাগ)।
- ন্যাপ (মো.) ১ আসন (২.২৪ ভাগ),
- জাসদ ৮ (৪.৮৩ ভাগ) আসন পায়।
এখানে লক্ষণীয়,
মুসলিম লীগ ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামী) ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ২৬৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২০টিতে বিজয় হয় (১০.০৭ ভাগ ভোট)। তারা ওই সময় নবগঠিত বিএনপির সঙ্গে কোনো ঐক্য করেনি। সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে ১৯৮৬ ও '৮৮ সালে দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। কোনো ফ্রন্টও গঠিত হয়নি।
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৮৬ঃ
৭ই মে ৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন -
- নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন নিয়ে জয় লাভ করে
- আওয়ামী লীগ (৭৬ আসন, ২৬.১৬ ভাগ ভোট),
- জামায়াতে ইসলামী (১০ আসন, ৪.৬১ ভাগ ভোট),
- যুক্ত ন্যাপ (৫ আসন, ১.৩৯ ভাগ ভোট),
- সিপিবি (৫ আসন, ০.৯১ ভাগ ভোট),
- ন্যাপ (মো.) (২ আসন, ০.৭১ ভাট ভোট) অংশ নিয়েছিল। কিন্তু কোনো জোট করেনি।
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৮৮ঃ
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৮৮ বাংলাদেশে ৩রা মার্চ ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনটি বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রধান দলই বর্জন করেছিল; যেমন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মুজাফ্ফর) এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জয় লাভ করে, তারা ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৫১টি আসন লাভ করে। মোট ভোটারদের মধ্যে ৫২.৫% ভোট গৃহীত হয়েছিল।
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯১ঃ
পরিবর্তিত রাজনীতির আলোকে পঞ্চম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়েছিল ২৭শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে, যা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। এ নির্বাচনের আগে ও পরে জোটের রাজনীতি নতুন রূপ পায়।
- বিএনপি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়, বিজয়ী হয় ১৪০টিতে (ভোট ৩০.৮১ ভাগ) আর
- আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয় ২৬৪ আসনে (৮৮ আসন, ৩০.১০ ভাগ ভোট),
- বাকি আসন সিপিবি, ন্যাপ, বাকশাল প্রার্থীদের ছেড়ে দেয়।
- জামায়াতে ইসলামী ২২২ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয় ১৮টিতে (১২.১৩ ভাগ)
- জাতীয় পার্টি তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২৭২ আসনে প্রার্থী দিয়ে তারা বিজয়ী হয় ৩৫টিতে (১১.৯২ ভাগ ভোট)।
আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে-
- বাকশাল ৫ আসনে (১.৮১ ভাগ),
- সিপিবি ৫ আসনে (০.১৯ ভাগ ভোট) বিজয়ী হয়েছিল।
নির্বাচনের পর সরকার গঠন প্রশ্নে বিএনপি জামায়াতের সমর্থন নিয়েছিল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ যাদের সমর্থন দিয়েছিল, তাদের নিয়েও কোনো ঐক্যজোট করেনি।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯৬(ফেব্রুয়ারি)
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১%। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনে জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ৩০০টি আসনই লাভ করে। পরবর্তীতে নিরপেক্ষ নির্বাচন জুনে অনুষ্ঠিত হয়।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯৬(জুন)
প্রথমবারের মতো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান-এর নেতৃত্বাধীন। এবার আর আওয়ামী লীগ কোনো আসন ছাড়েনি।
- আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৪৬টিতে বিজয়ী হয় (৩৭.৪৪ ভাগ ভোট)।
- জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ২৯৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পায় ৩২টি (১৬.৩৯ ভাগ ভোট) অন্য 'মিত্ররা' কোনো আসন পায়নি।
- বিএনপি ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পায় ১১৬টি (৩৩.৬১ ভাগ ভোট)। তাদের 'মিত্র' জামায়াতে ইসলামীও ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পায় মাত্র ৩টি (৮.৬১ ভাগ ভোট)।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০১ঃ
দৃশ্যপট আবারো পাল্টে যায় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, ২০০১ সালে। এবারে বিএনপি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে (শরিক জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টিথ নাজিউর)।
- বিএনপি প্রার্থী দেয় ২৫২ (বিজয়ী ১৯৩, ৪০.৯৭ ভাগ ভোট),
- জামায়াত প্রার্থী দেয় ৩১ (বিজয়ী ১৭, ৪.১৮ ভাগ ভোট),
- ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ছিল ৭ (বিজয়ী ২, ০.৬৮ ভাগ ভোট) আর
- জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল ১১ (বিজয়ী ৪, ১.১৮ ভাগ ভোট)। চারদলীয় জোট মোট ৪৭ ভাগ ভোট পায়। আওয়ামী লীগ সব আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয় ৬২টিতে (৪০.১৩ ভাগ প্রাপ্ত ভোট)।
- জাতীয় পর্টির (এরশাদ) নেতৃত্বাধীন ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ২৮১ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয় ১৪টিতে (৭.২৫ ভাগ ভাগ)।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০৮ঃ
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃশ্যপট আবার ভিন্ন, ২০০৮ সালে।
- চারদলীয় জোট জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে ৩৩ আসনে বিজয়ী হয় (জামায়াত ২ ও বিজেপি ১ আর বিএনপির একক আসন ৩০)।
- প্রাপ্ত ভোট বিএনপির ৩২.৪৫,
- জামায়াতের ৪.৬০ ও বিজেপির ০.২৬ ভাগ।
- এ জোটে এখন এলডিপি (১ আসন) শরিক (০.২৭ ভাগ)
- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আসন ২৩১ (৪৮.০৬ ভাগ ভোট)
- মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) আসন ২৬ (৭.০৫ ভাগ),
- জাসদের ৩ (০.৭৪ ভাগ) আর ওয়ার্কার্স পার্টির ২ (০.৩৮ ভাগ)।
এটি ছিল তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তৃতীয় নির্বাচন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ-এর নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকারের অধীনে। সামরিক সরকার ২০০৭ সালের শুরুর দিকে জরুরী অবস্থা জারি করে যা ২০০৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর তুলে নেওয়া হয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪ঃ
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৪ বাংলাদেশে ৫ই জানুয়ারি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও সতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এছাড়াও নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
জোট রাজনীতির এই যে চিত্র তাতে দেখা যায়ঃ
১. এ দেশের রাজনীতির দুটি ধারা স্পষ্ট। একটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, অপরটি বিএনপির নেতৃত্বে।
২. মূলত চারটি দল বার বার সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। এককভাবে এদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবানাও রয়েছে। দুটি বড় দলের বাইরে রয়েছে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ও জামায়াতে ইসলামী। তবে এদের একার পক্ষে কোনো জোটের নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব নয়।
৩. এদের বাইরে সংসদে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, এলডিপির অস্তিত্ব রয়েছে সত্য। কিন্তু জোটের প্রার্থী না হলে নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করলে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সংসদের বাইরে যে রাজনীতি সেখানেও এই রাজনীতি প্রতিফলিত হয়। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এখনো একটি আঞ্চলিক দল, আর জামায়াতের ভোটব্যাংক মাত্র ৪-৫ ভাগ। আগামী রাজনীতি তথা সংসদ নির্বাচনে এ জোটের রাজনীতি প্রতিফলিত হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি নেতা এইচ এম এরশাদ এককভাবে নির্বাচনের কথা বললেও, চূড়ান্ত বিচারে তিনি মহাজোটেই থাকবেন। আর বেগম জিয়া জামায়াতের প্রশ্নে বড় ধরনের 'ডায়নামা' ফেস করছেন। গত বিজয় দিবসে (২০১২) জামায়াতকে দাওয়াত না করা একধরনের স্ট্র্যাটেজি। শেষ পর্যন্ত তিনি সংসদকেন্দ্রিক চারদলীয় ঐক্য ধরে রাখবেন। নির্বাচন প্রশ্নে কাদের সিদ্দিকী ও আ স ম আবদুর রবের সঙ্গে তাদের একটি ঐক্য হতে পারে। তৃতীয় একটি জোটের কথা বলা হলেও এ জোট গঠিত হবে বলে মনে হয় না। একককভাবে কোনো একটি দলের পক্ষে সংসদ কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব হবে না। দুটো বড় দলকেই এখনো আগামীতে জোট রাজনীতির ওপর নির্ভর করতে হবে।
সূত্রঃ জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এবং নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইট ।