আপনার জন্য আরো লেখা
সংলাপ-ই নাটকের প্রাণ। কাল্পনিক সংলাপে মানুষের কল্যাণ চিন্তা, শিল্প-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য-ইতিহাস, ধর্মবোধ ও জীবন চিন্তা-চেতনা বোধের পরিচয় থাকে। যা সংলাপ রচনাকারী নিজে নিজেই প্রশ্ন করে নিজেই নিজের ভাষায় উত্তর দিয়ে থাকে।
সংলাপ রচনায় নিচের বিষয় গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরীঃ
একেবারে প্রথমে সংলাপে অংশগ্রহণকারী চরিত্রগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় পরিচিতি দিতে হবে, তাদের কি রকমের মাঝে সম্পর্ক বিরাজ করছে ও আলোচনার বিষয়বস্তু কিংবা ঘটনা ছোট একটু বিবরন দিতে হবে।
- অবশ্যই সংলাপ হতে হবে স্বাভাবিক সহজ-সরল কথা বার্তার মত এবং সাবলীল ভাষায়।
- যে ঘটনা কিংবা বিষয়ের উপর আপনি সংলাপ লিখা শুরু করবেন ভাবছেন, তা প্রথমে চিন্তা করে নিবেন। তারপর তা যুক্তি তর্ক, মতামত বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা যেভাবে উপস্থাপন করবেন তা স্থির করুন।
- আদার ব্যাপারী কখনো জাহাজের খবর জানবে না মনে রাখবেন। স্থান কাল মাথায় রেখে চরিত্রের মুখে সংলাপ বসাবেন। একজন অশিক্ষিত রিক্সা চালকের সাথে একজন শিক্ষিত ভদ্রলোকের সংলাপ রচনায়, এমন কথা রিক্সা চালকের মুখে বসানো যাবে না, যা তার সাথে যায় না কিংবা ভিক্ষুক কখনও দেশের অর্থনীতির ব্যাখ্যা দেবে না ইত্যাদি।
- যতি বা ছেদ চিহ্নের যথাযথ ব্যবহার করবেন।
- যাদের মধ্যে সংলাপ বা আলোচনা হবে সেই চরিত্রের ব্যাপারে কোনো কিছু উল্লেখ না থাকলে, প্রয়োজন অনুসারে চরিত্র নিজেই বানাতে হবে।
- প্রতিটি চরিত্রকে এক সমানভাবে কথা বলার সুযোগ দিবেন। তবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা মতামত কিংবা যুক্তি প্রদানে একজন বা দু'জনের সংলাপ দীর্ঘ হতে পারে।
- সংলাপ সরল ও ছোট বাক্যের হলে ভালো হয়। হালকা ব্যাঙ্গ বিদ্রূপ বা কৌতুকের মাধ্যমে কিছুটা নাটকীয়তা ভাবে তৈরী করলে সমস্যা নাই।
- খেয়াল রাখবেন সংলাপ যেন শুধু প্রশ্ন ও উত্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। সংলাপ আলোচনার মাধ্যমেই উপস্থাপন হবে। তবে এতে যুক্তি তর্কের কিছু সংলাপ থাকতে হবে।
- অযথা কিংবা অযৌক্তক সংলাপ এড়িয়ে যাবেন। স্বাভাবিক, সরল ভাবে লিখে যাবনে। এতে অনেক সময় এমন সংলাপ রচিত হবে যা চিন্তা করে লেখা সম্ভব হতো না।
- সংলাপে বর্তমান সরকারের বিপক্ষে কথা বলতে যাবেন না। মনে করেন, সংলাপে তিন জন ব্যক্তির আলোচনা হচ্ছে। এইখানে দুই জন পক্ষে বলবে আর ওপর জন বলবে আরো কি কি দরকার ছিল এই পরিবর্তনের জন্য কিংবা এই ব্যবস্থা নিতে। যেন এমন হয়, সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে, এখনো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন।
- সবসময় ইতিবাচক সংলাপের আলোচনা দিয়ে পরস্পর সংলাপ শেষ করে হবে।
- এক কথায় আপনার সংলােপর সারমর্ম যেন সরকােরর সফলতােকই ইঙ্গিত করে সেদিকে খুব ভাল করে নজর দিতে হবে।
সংলাপের কিছু বাস্তবধর্মী উদাহরণঃ
একটি কথার পরে কথা জিজ্ঞাসা করবেন না। যেমনঃ
আকিবঃ হ্যালো সাকিব!
সাকিবঃ হাই, আকিব ! কেমন আছ তুমি?
আকিবঃ আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
সাকিবঃ আমিও ভালো আছি। তোমার সাথে অনেক দিন পর দেখা !
আকিবঃ হ্যাঁ। অনেক দিন পর। এখন কোথায় থাকছো?
সাকিবঃ আমি এখন ঢাকায় থাকছি। তুমি?
আকিবঃ আমি এখন রাজশাহী থাকছি।
এভাবে না লিখে কিছু সংলাপকে এড়িয়ে যেতে হবে, এতে করে নতুন নতুন আরো সংলাপ তৈরী হবে। যেমনঃ
আকিবঃ হ্যালো সাকিব!
সাকিবঃ আকিব! কি খবর তোমার?
আকিবঃ আমার খবর ভাল। আজকাল কোথায় আছো তুমি?
সাকিবঃ ঢাকাতে। আকিব ... তুমি নাকি বিয়ে করেছো?
আকিবঃ হ্যাঁ। অনেক দিন-ই তো হলো। হঠাৎ-ই করে ফেলেছি! তুমিও নাকি এই মাসেই বিয়ে করছো!
সাকিবঃ হ্যাঁ। আচ্ছা, তুমি ভাবিকে নিয়ে এখন উঠেছো কোথায়?
আকিবঃ রাজশাহীতে। আচ্ছা, চলো চা খেতে খেতে কথা বলা যাক।
বিঃদ্রঃ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যালেনের টকশো দেখলে আপনি ভাল ভাবে অনুধাবন করতে পারবেন। তাছাড়া, বিভিন্ন গোল টেবিল বৈঠক এর আলোচনার অংশবিশেষ দৈনিক পত্রিকা থেকে দেখে নিতে পারেন। আরো সহজ হয়ে যাবে।
বিঃদ্রঃ কথার পৃষ্ঠের লেগুর লাগানো কথা এড়িয়ে যাবেন। ফলে আপনি বেশি সংলাপ তৈরী করতে পারবেন। তবে বেশি এড়াতে যেয়ে আবার এলোমেলো সংলাপ তৈরী করা যাবে না। তাহলে হিতে বিপরীত হবে। সংলাপের ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে সংলাপ তৈরী করতে হবে।